সূরাতুল ক্বদর, লাইলাতুল ক্বদর এর ইবাদতসমূহের ফযিলত ও গুরুত্ব
সূরা আল-ক্বদর আল-কুরআনের অত্যন্ত মর্যাদামসম্পন্ন একটি সূরা। এটি মক্কা নগরীতে অবতীর্ণ হয়। এর আয়াত সংখ্যা ৫ (পাঁচটি)। সূরা আল ক্বদর কুরআন মজিদের ৯৭ তম সূরা। এ সূরায় 'লাইলাতুল ক্বদর' এর ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। এ সূরায় লাইলাতুল ক্বদর শব্দটি মোট তিনবার এসেছে। এর ক্বদর শব্দ থেকে এ সূরার নাম রাখা হয় সূরা আল-ক্বদর।
অবতীর্ণের প্রেক্ষাপটঃ
একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বনি ইসরাইলের এমন একজন লোক সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন, যিনি সমস্থ রাত ইবাদতে লিপ্ত থাকতেন এবং সারা দিন জিহাদ করতেন। এভাবে এক হাজার মাস যাবত অবিরাম আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে মগ্ন থাকেন। এ বিবরণ শুনে সাহাবিগণ বিস্ময় প্রকাশ করলেন। অতঃপর নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে আফসোস করতে লাগলেন।
সাহাবিগণ ভাবলেন - আমরা এক হাজার মাস ইবাদত করার সুযোগ পাব না। অথচ পূর্ববর্তীগণ বহু বছর বেচে থাকতেন। বেশি দিন ইবাদত করার সুযোগ পেতেন। ফলে আমরা ইবাদতের সাওয়াবে কোন দিন তাদের সমান হতে পারব না। সাহাবিগণের আফসোসের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা এ সূরা নাজিল করেন। এতে তিনি জানিয়ে দেন যে, লাইলাতুল ক্বদরের এক রাতের ইবাদত হাজার মাস ইবাদত করার চেয়েও উত্তম।
সূরা এবং এর অর্থঃ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
আল্লাহর নাম নিয়ে (আরম্ভ করছি), (যিনি) রহমান (--পরম করুণাময়, যিনি অসীম করুণা ও দয়া বশতঃ বিশ্বজগতের সমস্ত সৃষ্টির সহাবস্থানের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা অগ্রিম করে রেখেছেন), (যিনি) রহীম (--অফুরন্ত ফলদাতা, যাঁর অপার করুণা ও দয়ার ফলে প্রত্যেকের ক্ষুদ্রতম শুভ-প্রচেষ্টাও বিপুলভাবে সাফল্যমণ্ডিত ও পুরস্কৃত হয়ে থাকে)।
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
নিঃসন্দেহ আমরা এটি অবতারণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে।
وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ
আর কী তোমাকে বুঝতে দেবে মহিমান্বিত রজনীটি কি?
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ
মহিমান্বিত রজনী হচ্ছে হাজার মাসের চাইতেও শ্রেষ্ঠ।
تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ
ফিরিশ্তাগণ ও রূহ্ তাতে অবতীর্ণ হয় তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে প্রতিটি ব্যাপার সন্বন্ধে --
سَلَامٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ الْفَجْرِ
শান্তি -- ফজরের উদয় পর্যন্ত তা চলতে থাকবে।
ব্যাখ্যাঃ
লাইলাতুল ক্বদর বা ক্বদরের রাত অত্যন্ত মর্যাদাবান ও মহিমান্বিত রাত। আল্লাহ তায়ালা এ রাতেই পবিত্র কুরআন নাজিল করেন। এ রাতের ইবাদত হাজার মাস একাধারে ইবাদত করার চাইতেও উত্তম। এক হাজার মাস ৮৩ বছর ৪ মাসের সমান। আমাদের আয়ুষ্কাল খুবই সীমিত। এ অবস্থায় এ রাতে ইবাদত করলে আমাদের নেকির পরিমাণ অন্নেক বেড়ে যায়। এটি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিয়ামত স্বরুপ। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাকে রহমত, বরকত ও শাস্তির সওগাত দিয়ে প্রেরণ করেন। এ রাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুখ-শান্তি ও রহমত বিরাজ করতে থাকে।
শিক্ষাঃ
১। লাইলাতুল ক্বদর অত্যন্ত মহিমান্বিত রাত।
২। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম।
৩। এ রাতে ফেরেশতাগণ শান্তি ও কল্যাণ নিয়ে দুনিয়ায় নেমে আসেন।
৪। এ রাতে সারাক্ষন শান্তি ও রহমত বর্ষিত হয়।
আমরা যথাযথভাবে লাইলাতুল ক্বদর উৎযাপন করব। বেশি বেশি নফল ইবাদত বন্দেগি করব। এ রাতের সামান্য সময়ও আমরা ইবাদত না করে কাটাব না। তাহলে আমরা হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা বেশি সাওয়াব লাভ করব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনে শান্তি ও কল্যাণ দান করুন।
এ সম্পর্কিত বিস্তারিতঃ
১। লাইলাতুল ক্বদরের ফযিলত।
২। ক্বদরের ইবাদত / নামাযের নিয়ম।
৩। সূরাতুল ক্বদরের ফযিলত।
৪। সূরাতুল ক্বদর এর অর্থ, ব্যাখ্যা, অবতীর্নের প্রেক্ষাপট।
৫। লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা।