মানুষের চরিত্র বা আখলাক - ইসলামী জীবন দর্শনের আলোকে
মানুষের চরিত্র এবং আখলাক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়। মানুষের আচার - আচরন, সংবরন, কথা বলার ধরন, অন্য মানুষ বা প্রানীর প্রতি তাঁর প্রয়োগকৃত ব্যবহারকেই আমরা চরিত্র হিসেবে জানি। মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মের মধ্য দিয়ে যে আচার-আচরণ ও স্বভাব-চরিত্রের প্রকাশ পায় তাকে আখলাক বলে। আখলাক (أخلاق) আরবী শব্দ خلق "খুলকুন" এর বহুবচন। যার অর্থ - চরিত্র বা স্বভাব। মানব জীবনের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং আন্তর্জাতিক সকল দিকই আখলাকের অন্তর্ভুক্ত।
আখলাকের প্রকারভেদঃ
পৃথিবীতে অনেক ধরন ও চরিত্রের মানুষ থাকলেও মূলত চরিত্র বিশেষে - আখলাক প্রধানত ২ ভাবে বিভক্ত।
১। আখলাকে হামিদাহ (أخلا إلى حميدة): মানবজীবনের উত্তম গুনাবলিকে আখলাকে হামিদাহ বা প্রশংসনীয় চরিত্র বলে। যেমন - ধৈর্য, সততা, দেশপ্রেম, সমাজসেবা প্রভৃতি। এ সকল চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি সমাজে নন্দিত ও সম্মানিত।
২। আখলাকে যামিমাহঃ মানবজীবনের নিকৃষ্ট চরিত্রকে আখলাকে যামিমাহ বা নিন্দনীয় চরিত্র বলে। যেমন - অহংকার, ঘৃণা, মিথ্যাচার, সুদ, ঘুষ, অশ্লীলতা প্রভৃতি। এ সকল চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি সমাজে ঘৃণিত ও নিন্দিত।
আখলাকের গুরুত্বঃ
ইসলামের দৃষ্টিতে আখলাকের গুরুত্ব সর্বাধিক। আখলাকই উন্নত জাতির জীবনীশক্তি। যে জাতির চরিত্র যত ভালো থাকে, সে জাতি তত শক্তিশালী। যে জাতির চরিত্র ঠিক নেই, সে জাতি পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারে না। সকল নবী ও রাসুল (সাঃ) নিজ নিজ জাতিকে উত্তম চরিত্রের শিক্ষা দিয়েছেন। আর উন্নত চরিত্রকে পূর্ণতা দানের জন্য শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) - কে আল্লাহ তায়ালা পাঠিয়েছেন। মহানবী (সাঃ) বলেছেন - "উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা দানের জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি। " (বায়হাকি)
উত্তম চরিত্র ব্যক্তিকে সুন্দর ও উন্নত করে। আর সমাজের সকল মানুষ চরিত্রবান ব্যক্তিকে ভালোবাসে ও শ্রদ্ধা করে। অপরদিকে চরিত্রহীন ব্যক্তি সকলের নিকট ঘৃনিত ও নিন্দিত। যার চরিত্র যত উন্নত ধর্মের দিক থেকেও সে তত আগ্রসর। নবী (সাঃ) বলেন - "উত্তম চরিত্রই হলো সকল নেক কাজের মূল কথা ।" (মুসলিম)
চরিত্র মানুষের ভূষণ। চরিত্রবলেই মানুষ সর্বত্র সমাদৃত হয়। ভালো চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি অধিকতর ইমানদান হয়। মহানবী (সাঃ) বলে - "চরিত্রের বিচারে যে লোক উত্তম, মুমিনদের মধ্যে সেই পূর্ণতম ইমানের অধিকারী ।" (আবু দাউদ ও দারিমি)
কিয়ামতের দিন পরিমাপদন্ডে উত্তম চরিত্রের ওজন হবে অত্যন্ত ভারী। নবী করিম (সাঃ) বলেন - "মুমিনের পরিমাপদন্ডে কিয়ামতের দিন উত্তম চরিত্র অপেক্ষা ভারী জিনিস আর কিছুই নেই ।" (তিরমিযি)
উত্তম চরিত্র মানুষের পাপকে খন্ডন করে দেয়। নবী করিম (সাঃ) বলেন - "উত্তম চরিত্র পাপকে এমনভাবে বিগলিত করে যেমন ভাবে সূর্যতাম বরফকে বিগলিত করে ।" (তাবারানি, বায়হাকি)
উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি আখিরাতে তাঁর উত্তম চরিত্রের বিনিময়ে অত্যধিক মর্যাদা লাভ করবে। মহানবী (সাঃ) বলেন, "বান্দা তাঁর উত্তম চরিত্রের বলে আখিরাতে বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানিত স্থানে উন্নীত হবে, যদিও সে ইবাদতের দিক থেকে দূর্বল থাকে"। (তাবারানি)
আমরা উত্তম চরিত্র অর্জন করব। নিন্দনীয় স্বভাব পরিহার করব। আমরা দুনিয়াতে সকলের কাছে প্রিয় হব। পরকালে অশেষ মর্যাদা লাভ করব।
সম্পর্কিতঃ
১। কিভাবে স্বীয় আখলাককে ইসলামী আদর্শে রুপান্তরিত করা যায়?
২। আখলাক বা চরিত্রকে হেফাজতের উপায় সমূহ কি কি?
৩। ইসলামী আদর্শে রঞ্জিত চরিত্র কেমন হয়?
৪। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় আখলাক বা চরিত্রের রুপান্তর পদ্ধতি সমূহ কি?
৫। নিরাপদ এবং সুন্দর চরিত্র গঠনে আল-কোরাআন ও হাদিসের নির্দেশ সমূহ কি কি?
৬। উত্তম আখলাক বা উত্তম চরিরের সামাজিক গুরুত্ব কতটুকু?
৭। নিজের চরিত্রকে হেফাজতের আমলসমূহ কি কি?
৮। ইসলামী জীবন (Islamic Life) ব্যবস্থায় নারী ও পুরুষের চরিত্র কেমন হওয়া উচিৎ?
৯। ইসলামী জীবন দর্শনে উত্তম চরিত্র বা আখলাক প্রাপ্তির উপায়সমূহ বা করণীয়?
0 মন্তব্য বা কমেন্টস