সুদ ও ঘুষের প্রচলন এবং কুফল

By Islam Hossain - April 07, 2021

আল কোরআন ও হাদিসের আলোকে সুদ এবং ঘুষ অতীব খারাপ এবং গুনাহযুক্ত কাজ। ইসলামী জীবন (Islamic Life) ব্যবস্থায় সুদ এবং ঘুষ হারাম। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সুদ-ঘুষ লেনদেন থেকে বিরত থাকার জন্য কঠোর হুসিয়ারী এবং নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। চলুন সুদ ও ঘুষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক - Islamic Llife এর পোস্ট থেকে। 


সুদ ও ঘুষের পরিচয়ঃ  

ঘুষ অর্থ উৎকোচ। এর আরবি প্রতিশব্দ الرشوة 'রেশওয়াত'। অবৈধ সহায়তার জন্য প্রদত্ত গোপন পরিতোষিকই ঘুষ। কর্তব্যরত কোন ব্যক্তির নিকট থেকে কাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিছু দেওয়া ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। কোন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করে উপঢৌকন গ্রহণ করাও ঘুষ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, "যে ব্যক্তি কারো জন্য সুপারিশ করল, আর এ সুপারিশের প্রতিদানস্বরুপ তাকে কিছু উপহার দেওয়া হলে, সে যদি তা গ্রহন করে, তবে সে সুদের দরজাসমুহের একটি বড় দরজায় উপস্থিত হবে।" (কিতাবুল কাবায়ির)


সুদ ও ঘুষের প্রচলন এবং কুফল - Islamic Life


সুদের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করা, ইসলামী জীবনব্যবস্থায় একটি অমার্জনীয় সামাজিক অপরাধ । ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ হল একটি মারাত্মক ও ধ্বংসাত্বক শোষণের কৌশল । আরবীতে একে বলা হয় রিবা, ইংরেজীতে Interest ।  আর ঘুষ হল একটি সামাজিক ব্যধি, সমাজের ক্ষমতাহীন মানুষেরা তাদের হৃত অধিকার কিংবা অন্যের অধিকারকে করায়ত্ব করার লক্ষে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিকে যে অবৈধ অর্থ কিংবা পণ্য সামগ্রী পর্দার অন্তরালে (গোপনে) প্রদান করে তাই ঘুষ বা উৎকোচ নামে পরিচিত। ইংরেজীতে একে বলা হয় Bribe ।


পবিত্র কোরআনে্র উদ্ধৃতিঃ 

১। সূরা-বাকারা,আয়াত-১৮৮

وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ

অর্থঃ তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করোনা । এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারককে উৎকোচ দিও না । 

২। সূরা-বাকারা,আয়াত-২৭৫

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ فَمَنْ جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّهِ فَانْتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থঃ যারা সুদ খায় তারা দাঁড়াতে পারে না তার মতো দাঁড়ানো ছাড়া যাকে শয়তান তার স্পর্শের দ্বারা পাতিত করেছে। এমন হবে কেননা তারা বলে -- ''ব্যবসা-বাণিজ্য তো সুদী-কারবারের মতোই।’’ কিন্তু আল্লাহ্ বৈধ করেছেন ব্যবসা-বাণিজ্য, অথচ নিষিদ্ধ করেছেন সুদখুরি। অতএব যার কাছে তারা প্রভুর তরফ থেকে এই নির্দেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে তার জন্যে যা গত হয়ে গেছে, আর তার ব্যাপার রইল আল্লাহ্‌র কাছে। আর যে ফিরে যায় তারাই হচ্ছে আগুনের বাসিন্দা, এতে তারা থাকবে দীর্ঘকাল। 

৩। সূরা-রুম,আয়াত-৩৯ 

وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ رِبًا لِيَرْبُوَ فِي أَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُو عِنْدَ اللَّهِ ۖ وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ

অর্থঃ আর যা-কিছু তোমরা সুদে দিয়ে থাক যেন এটি বাড়তে পারে, -- তা কিন্তু আল্লাহ্‌র সমক্ষে বাড়বে না। আর যা তোমরা দিয়ে থাক যাকাতে আল্লাহ্‌র চেহারা কামনা করে, তাহলে এরাই স্বয়ং বহুগুণিত লাভবান হবে।

৪। সূরা-বাকারা,আয়াত-২৭৮ ও ২৭৯ 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ  

অর্থঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহ্‌কে ভয়-শ্রদ্ধা করো, আর সুদের বাবদ বকেয়া যা আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা ঈমানদার হও।

فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ

অর্থঃ কিন্তু যদি তোমরা না করো তবে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের তরফ থেকে সংগ্রামের ঘোষণা জেনে রেখো। আর যদি তোমরা ফেরো তবে তোমাদের জন্য রইল তোমাদের ধনসম্পত্তির আসলভাগ। অত্যাচার করো না এবং অত্যাচারিতও হয়ো না। 

৫। সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৬ 

يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ 

অর্থঃ আল্লাহ্ সুদখুরিকে নিষ্ফল করেছেন, এবং দান-খয়রাতকে অগ্রগামী করেছেন। আর আল্লাহ্ সকল অবিশ্বাসী পাপীকে ভালোবাসেন না।

৬। সূরা-আল ইমরান,আয়াত-১৩০

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُضَاعَفَةً ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

অর্থঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! সুদ গলাধঃকরণ করো না তাকে দ্বিগুণ ও বহুগুণিত করে; আর আল্লাহ্‌কে ভয়-শ্রদ্ধা করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।


কুফলঃ 

সুদ ও ঘুষ উভয়ই সামাজিক অপরাধ। ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন হয়। ঘুষ গ্রহীতাকে সকলে ঘৃণা করে। ঘুষ গ্রহণ এবং দেওয়া দুটিই পাপ কাজ। ঘুষ গ্রহীতা ও দাতার উপর আল্লাহ তায়ালার অভিশাপ বর্ষিত হয়। 

ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ 

عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ الرِّبَا وَإِنْ كَثُرَ فَإِنَّ عَاقِبَتَهُ تَصِيْرُ إِلَى قَلٍّ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সুদ এমন বস্তু যার পরিণাম হচ্ছে সংকুচিত হওয়া যদিও তা বৃদ্ধি মনে হয়’ (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৮২৭)।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم الرَاشِيَ وَالْمُرْتَشِيْ.

অর্থঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুষ গ্রহণকারী ও ঘুষ প্রদানকারীর উপর অভিশাপ করেছেন (ইবনু মাজাহ, সনদ ছহীহ, মিশকাত, হা/৩৭৫৩ ‘নেতৃত্ব’ অধ্যায়)।

আবূ উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَنْ شَفَعَ لِأَخِيْهِ بِشَفَاعَةٍ فَأَهْدَى لَهُ هَدِيَّةً عَلَيْهَا فَقَبِلَهَا فَقَدْ أَتَى بَابًا عَظِيْمًا مِنْ أَبْوَابِ الرِّبَا.

অর্থঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো জন্য সুপারিশ করল এবং সেই সুপারিশের প্রতিদান স্বরূপ তাকে কিছু উপহার দিল। যদি সে তা গ্রহণ করে তাহলে সে সূদের দরজাসমূহের একটি বড় দরজায় উপস্থিত হল’ (আবূদাঊদ, সনদ হাসান, মিশকাত, হা/৩৭৫৭)

বুরায়দাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

عَنْ بُرَيْدَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَنْ اسْتَعْمَلْنَاهُ عَلَى عَمَلٍ فَرَزَقْنَاهُ رِزْقًا فَمَا أَخَذَ بَعْدَ ذَلِكَ فَهُوَ غُلُوْلٌ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি যাকে ভাতা দিয়ে কোন কাজের দায়িত্ব প্রদান করেছি সে যদি ভাতা ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করে তাহলে তা হবে খিয়ানাত’ (আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৩৭৪৮)।


খাওয়ালাহ আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

عَنْ خَوْلَةَ الْأَنْصَارِيَّةِ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ رِجَالاً يَتَخَوَّضُوْنَ فِيْ مَالِ اللهِ بِغَيْرِحَقٍّ فَلَهُمُ النَّارُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কিছু লোক আল্লাহর সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে।                                                                                                                                                                                      


সুদ ও ঘুষ সম্পর্কিতঃ 

১। সুদ লেনদেন এর কুফল এবং এর ইহকালীন ও পরকালীন পরিনতি । 

২। ঘুষ লেনদেন এর ইহকালীন ও পরকালীন  পরিনতি সমূহ। 

৩। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় সুদ ও ঘুষ কেন হারাম? 

৪। সুদ ও ঘুষ লেনদেনের কারনে মানুষের যে সকল ক্ষতি সাধিত হয়। 

৫। আল-কোরআনের আলোকে সুদ ও ঘুষ। 


  • Share:

You Might Also Like

0 মন্তব্য বা কমেন্টস