নিফাক বা ভন্ডামী হল - মানুষের দ্বারা ঘঠিত মারাত্মক খারাপ কাজ। এর মাধ্যমে সমাজে, পরিবারে বিভিন্ন ধরনের অরাজগতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। মহাল আল্লাহ তায়ালা নিফাককে মারাত্মক অপরাধ হিসেবে গন্য করেছেন এবং তাঁর বান্দাদের এ হতে মুক্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। চলুন আজ Islamic Life এর পোস্ট থেকে মুনাফিক ও নিফাক বা ভন্ডামীর পরিচয়, নিফাকের কুফল এবং পরিনতি সম্পর্কে জেনে নেই ।
পরিচয়ঃ
নিফাক শব্দের অর্থ ভন্ডামি, কপটতা, প্রতারণা, দ্বিমুখী নীতি ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় মুখে ইমানের স্বীকার ও অন্তরে অবিশ্বাস করাকে নিফাক বলা হয়। যে ব্যক্তি এরুপ করে তাকে বলা হয় মুনাফিক। মুনাফিকরা সাধারনত সামাজিক ও পার্থিব লাভের জন্য এরুপ করে থাকে। তারা মুসলমান ও কাফির উভয় দলের সাথেই থাকে। প্রকাশ্যে তারা নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করে। কিন্তু গোপনে তারা ইসলামকে অস্বীকার করে। তাদের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন -
وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَىٰ شَيَاطِينِهِمْ قَالُوا إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُونَ
অর্থঃ "যখন তারা (মুনাফিকরা) ইমানদারদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে আমরা ইমান এনেছি। আর যখন তারা গোপনে তাদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি। আমরা শুধু তাদের সাথে ঠাট্টা-তামাশা করে থাকি।" (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৪)
মুনাফিকদের চরিত্রঃ
নিফাক হলো নৈতিকতা ও মানবিকতার আদর্শের বিপরীত কাজ। মুনাফিকদের চরিত্র দেখলে আমরা এ সত্য জানতে পাই। তারা সব ধরনের অন্যায় ও মন্দ কাজ করে থাকে। উত্তম আচরণ ও উত্তম চরিত্র তারা কখনোই অনুশীলন করে না। বরং মিথ্যা ও প্রতারণাই তাদের প্রধান কাজ। আল্লাহ পাক বলেন -
إِذَا جَاءَكَ الْمُنَافِقُونَ قَالُوا نَشْهَدُ إِنَّكَ لَرَسُولُ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّكَ لَرَسُولُهُ وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থঃ "আর আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, মুনাফিকরা নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী। " (সূরা আল মুনাফিকুন, আয়াত ১)
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
باب عَلاَمَةِ الْمُنَافِقِ
حَدَّثَنَا قَبِيصَةُ بْنُ عُقْبَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُرَّةَ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ ". تَابَعَهُ شُعْبَةُ عَنِ الأَعْمَشِ
চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান সে হচ্ছে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়। ১. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে; ২. কথা বললে মিথ্যা বলে; ৩. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে; এবং ৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীলভাবে গালাগালি দেয়। শু‘বা আ‘মাশ (রহ.) থেকে হাদীস বর্ণনায় সুফইয়ান (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। (২৪৫৯,৩১৭৮; মুসলিম ১/২৫ হাঃ ৫৮, আহমাদ ৬৭৮২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩)
নিফাকের কুফল ও পরিণতিঃ
নিফাক জঘন্যতম পাপ। এটা মানুষের চরিত্র ধ্বংস করে ফেলে। নিফাকের ফরে মানুষ অন্যায় ও অশ্লীল কাজে অভ্যস্থ হয়ে যায়। ফলে মানুষের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবাধ বিনষ্ট হয়। নিফাকের দ্বারা মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ফলে মানব সমাজে মারামারি, হানাহানি ও অশান্তির সৃষ্টি হয়।
মুনাফিকরা ইসলামের চরম শ্ত্রু। এরা বাইরে মুসলমান বলে দাবি করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা কাফিরদের পক্ষে কাজ করে। এদের গোপন শ্ত্রুতা মুসলমান্দের বিপদে ফেলে। এ শ্ত্রুরা গুপ্তচর হিসেবে কাজ করে। ইসলাম ও মুসল্মান্দের গোপন কথা ও পরিকল্পনা প্রকাশ করে দেয়। এরা মুসলমানদের মতানৈক্য ও মারামারি সৃষ্টির চেষ্টা করে। প্রকাশ্য শ্ত্রুর তুলনায় গোপন শ্ত্রু বেশি ক্ষতিকর। কেননা প্রকাশ্য শ্ত্রুর বিরুদ্ধে আত্ম্রক্ষামূলক ব্যবস্তা অবলম্বন করা যায়। কিন্তু যে গোপনে শ্ত্রুতা করে তাকে চেনা যায় না। তাঁর ক্ষতি থেকে বাচার জন্য আত্মরক্ষা করার্ব সুযোগ পাওয়া যায় না। ফলে বন্ধু বেশে সহজেই বড় ক্ষতিসাধন করতে পারে। এসব কারণে দুনিয়াতে মুনাফিকরা ঘৃণিত ও নিন্দিত হয়। আখিরাতেও তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠোর আযাব। আল্লাহ তায়ালা বলেন -
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۚ أَتُرِيدُونَ أَنْ تَجْعَلُوا لِلَّهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُبِينًا
অর্থঃ "নিশ্চয়ই মুনিফিকদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। " (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৪৫)
আমরা সকলেই নিফাক থেকে বেঁচে থাকব। হাদিসে যেসব কাজ মুনাফিকের নিদর্শ্ন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে আমরা সেগুলো বর্জন করব। খাঁটি মুমিন হিসেবে জীবনযাপনের চেষ্টা করব।
নিফাক পরিহারের উপায়ঃ
১। কথা বলার সময় সত্য কথা বলবে, মিথ্যা কথা বলা যাবে না।
২। কাউকে কথা দিলে তা রক্ষা করতে হবে।
৩। আমানত রক্ষা করবে। যেমন কারো কাছে কোন জিনিস ও সম্পদ আমানত রাখলে তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং ফেরত দিতে হবে। কারো সাথে কথা দিলে তা রক্ষা করতে হবে।
মুনাফেক, নিফাক বা ভন্ডামী সম্পর্কিতঃ
১। মুনাফেক কারা?
২। মানুষের মুনাফেক হবার লক্ষন এবং কারনগুলি?
৩। কি কি উপায়ে নিফাক এবং মুনাফেকী আচরন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়?
৪। নিফাক বা ভন্ডামী এর সম্পর্কে মহান আল্লাহ কি ইরশাদ করেছেন?
৫। নিফাকের ইহকালীন ও পরকালীন পরিনতি?
৬। মুনাফেক ব্যক্তি সমাজের কি কি ক্ষতি সাধন করতে পারেন?
৭। মুনাফেক থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সমূহ গুলি কি?
৮। কোরআন ও হাদিসের আলোকে মুনাফেক, নিফাক বা ভন্ডামীর বিস্তারিত।
0 মন্তব্য বা কমেন্টস