সালাত বা নামাজ কি, ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব সমূহ

By Islam Hossain - April 21, 2021

সলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী নামাজ বা সালাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি এবাদত। এটি ইসলামের মূল পাচটি ভিত্তিস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছেন। 

সালাত বা নামাজ কি, ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব সমূহ -Islamic Life


সালাত বা নামাজের পরিচয়

সালাত আরবি শব্দ । এর ফার্সি প্রতিশব্দ হলো নামায । এর অর্থ দোয়া, ক্ষমা প্রার্থনা করা ও রহমত(দয়া) কামনা করা । যেহেতু সালাতের মাধ্যমে বান্দা প্রভুর নিকট দোয়া করে, দয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে তাই একে সালাত বলা হয় । ইসলাম যে পাঁচটি রুকুনের (স্তম্ভের) উপর প্রতিষ্ঠিত তার দ্বিতীয়টি হলো সালাত । এ সম্পর্কে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন -

أَخْبَرَنَا أَحْمَدُ بْنُ سُلَيْمَانَ قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ قَالَ: حَدَّثَنَا مَالِكُ بْنُ مِغْوَلٍ، عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ، عَنْ طَلْحَةَ بْنِ مُصَرِّفٍ، عَنْ مُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: لَمَّا أُسْرِيَ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انْتُهِيَ بِهِ إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَهِيَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ، وَإِلَيْهَا يَنْتَهِي مَا عُرِجَ بِهِ مِنْ تَحْتِهَا وَإِلَيْهَا يَنْتَهِي مَا أُهْبِطَ بِهِ مِنْ فَوْقِهَا حَتَّى يُقْبَضَ مِنْهَا قَالَ: {إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى} [النجم: 16] قَالَ: فَرَاشٌ مِنْ ذَهَبٍ، فَأُعْطِيَ ثَلَاثًا: الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَخَوَاتِيمُ سُورَةِ الْبَقَرَةِ، وَيُغْفَرُ لِمَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِهِ لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا الْمُقْحِمَاتُ "

আবদুল্লাহ (ইব্‌ন মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে যখন মি‘রাজের রাতে ভ্রমণ করানো হয়েছিল তখন তাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সিদরাতুল মুনতাহা ষষ্ঠ আকাশে অবস্থিত।[১] তার নীচ থেকে যেসব জিনিস (নেক আমল, আত্মা ইত্যাদি) উর্দ্ধে উঠানো হয় এবং তার উপর হতে আল্লাহ্‌র যেসব নির্দেশ অবতীর্ণ হয়, সবকিছুই এখানে পৌঁছে থেমে যায়। তারপর এখান থেকেই তা গ্রহণ করা হয়।

আবদুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন:

١٦  إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَىٰ16  

দেখো! যা আচ্ছাদন করে তা ঢেকে দিয়েছিল সিদরাহ্‌-গাছকে,

আবদুল্লাহ বলেন, তা হল সোনার প্রজাপতি। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তিনটি পুরস্কার দেয়া হয়েছে। (১) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, (২) সূরা বাকারার শেষ কয়েকটি আয়াত এবং (৩) তাঁর উম্মতের যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করবে, তার মাগফিরাত।  

সালাত কোথায় ফরয হয়েছে - 

أَخْبَرَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ، عَنِ ابْنِ وَهْبٍ قَالَ: أَخْبَرَنِي عَمْرُو بْنُ الْحَارِثِ، أَنَّ عَبْدَ رَبِّهِ بْنَ سَعِيدٍ حَدَّثَهُ، أَنَّ الْبُنَانِيَّ حَدَّثَهُ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ «الصَّلَوَاتِ فُرِضَتْ بِمَكَّةَ»

وَأَنَّ «مَلَكَيْنِ أَتَيَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَذَهَبَا بِهِ إِلَى زَمْزَمَ، فَشَقَّا بَطْنَهُ , وَأَخْرَجَا حَشْوهُ فِي طَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ، فَغَسَّلَاهُ بِمَاءِ زَمْزَمَ، ثُمَّ كَبَسَا جَوْفَهُ حِكْمَةً وَعِلْمًا»

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

সালাত মক্কায় ফরয হয়েছে। দু‘জন ফেরেশতা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসেন। ফেরেশতাদ্বয় তাঁকে নিয়ে যমযমের নিকট যান। তারা তাঁর পেট বিদীর্ণ করেন এবং তাঁর ভেতরের বস্তু বের করে স্বর্ণের পাত্রে রাখেন ও যমযমের পানি দ্বারা ধৌত করেন। তারপর তাঁর মধ্যে ইলম ও হিকমত পূর্ণ করে দেন।


কিয়ামতের দিন আল্লাহ সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেবেন । রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন-

অর্থঃ "কিয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেওয়া হবে ।" (তিরমিযি) 


মহান আল্লাহ মুমিনের উপর দৈনিক পাঁচবার সালাত ফরজ (আবশ্যক) করেছেন । তা হলো-ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব ও এশা । সালাত একজন  মুমিনকে (বিশ্বাসী) মন্দ ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে । আল্লাহ তায়ালা বলেন-


اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ ۖ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ ۗ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ

অর্থ ঃ "নিশ্চয় সালাত মানুষকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে ।" (সূরা আল-আনকাবুত, আয়াত ৪৫)


শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ব্যতীত কখনোই সালাত ত্যাগ করা যাবে না ।


ধর্মীয় গুরুত্ব

একজন মুসলিমের দৈনন্দিন জীবনে সালাতের গুরুত্ব অপরিসীম । সালাত মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে । এর মাধ্যমে বান্দা তার প্রভুর সান্নিধ্য লাভ করতে পারে । ইমান মজবুত হয়, আত্মা পরিশুদ্ধ হয় । মানুষকে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে অভ্যস্ত করে তোলে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উওকারী । সালাতের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুল (স.) বলেছেন, "যে ব্যাক্তি মনোযোগসহ সালাত আদায় করে, কিয়ামতের দিন ঐ সালাত তার জন্য নুর হবে ।" (তাবারানি)

একদা  হযরত মুহাম্মদ (স.) তাঁর সাথিদের লক্ষ্য করে বলেন- 'যদি কারও বাড়ির পাশ দিয়ে একটি নদী প্রবাহিত হয় এবং কোনো লোক দৈনিক পাঁচবার ঐ নদীতে গোসল করে, তাহলে কি তার শরীরে কোনো  ময়লা থাকবে?' সাহাবিগণ উত্তরে বললেন, 'না' হে আল্লাহর রাসুল! তখন মহানবি (স.) আরও বললেন- পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ঠিক তেমনি তার (সালাত আদায়কারীর) গুনাহসমুহ দূর করে দেয় । মহানবি (স.) আরও বলেছেন, "সালাত হলো ইমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য ।" (তিরমিযি)

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) জামাআতের সাথে সালাত আদায় করার গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেন, "জামাআতের সালাত আদায় করলে একাকী আদায় করার চাইতে সাতাশ গুন বেশি সাওয়াব পাওয়া যায় ।" (বুখারি ও মুসলিম)

আর আল্লাহ তায়ালাও সালাতকে জামাআতের সাথে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন । আল্লাহ বলেন,

  وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ

 অর্থঃ "তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু কর ।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ৪৩)


সামাজিক গুরুত্ব

প্রবিত্র কুরআনের বহুস্থানে বহু সম্মিতিলভাবে সালাত আদায় করার কথা বলা হয়েছে । সালাতের কারণে দৈনিক পাঁচবার মুসলমানগণ একস্থানে মিলিত হওয়ার সুযোগ পায় । একে-অপরের খোঁজ-খবর নিতে পারে । সুখে-দুঃখে একে অপরের সহযোগিতা করতে পারে । এতে তাদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয় । এমনকি নামাযের সারিতে দারাতে গিয়ে উঁচু-নিচু কোনো ভেদাভেদ থাকে না । ফলে সালাত আদায়কারীর মধ্যে সাম্য সৃষ্টি হয় । সালাত আদায়ের মাধ্যমে মানুষ পারস্পারিক সকল মতপার্থক্য ভুলে একসাথে কাজ করার শিক্ষা পায় । 

সালাত আমাদেরকে সময়ের গুরুত্ব ও শৃঙ্খলাবোধ শিক্ষা দেয় । নেতার অনুসরণ করতে এবং নিয়মতান্ত্রিক ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনে উদ্ভুদ্ধ করে । আমরা সময়ের প্রতি লক্ষ রেখে নিয়মিত সালাত আদায় করব । জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলব। 


  • Share:

You Might Also Like

0 মন্তব্য বা কমেন্টস